মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্তি কিভাবে কমাবেন


কিভাবে আপনার সন্তানের স্মার্টফোনের আসক্তি কমাবেন,বাচ্চাদের মোবাইল আসক্তি ও প্রতিকার,শিশুর মোবাইল আসক্তি ও প্রতিকার,বাচ্চাদের মোবাইল আসক্তি কমানোর উপায়,শিশুর মোবাইল আসক্তি দূর করার কার্যকরী উপায়,মোবাইল আসক্তি,মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়,বাচ্চাদের মোবাইল ফোন আসক্তি কমাবেন যেভাবে,বাচ্চাদের মোবাইল আসক্তি কিভাবে কমাবো,কিভাবে মোবাইল ফোনের নেশা কাটাবে,শিশুর মোবাইল আসক্তির জেদ কিভাবে কমাবো,মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক,কিভাবে দূর করবেন মোবাইল ফোনের নেশা




আসক্তি শব্দটি খুবই ভয়ানক। আমরা আসলে যেকোনো বিষয়ে বা যেকোনো কিছুর প্রতি অতি সহজেই আসক্ত হয়ে পরি। যেকোনো বিষয়ে বা যেকোনো কিছুর প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি কখনো ভালো হতে পারে না, বরং আমাদের সুন্দর লাইফস্টাইল কে বাঁধা প্রদান করে বা ধ্বংস করে দেয়। অর্থাৎ আমরা বোঝাতে চাইছি ঐ সকল বিষয় যা মানুষকে খারাপ আসক্তি তৈরি করে সে সকল বিষয়ে আসক্তি খুবই ভয়ানক।


আজ এই আধুনিক বিশ্বে আমরা এই ফোন বা অন্যান্য সকল ডিভাইস ছাড়া এক মূহূর্ত চলতে পারি না। এই সকল উন্নত ডিভাইস এর সাহায্যে আমরা বিভিন্ন ভাবে উপকৃত হই বা হচ্ছি। আধুনিক বিশ্বে এসকল বিষয় ছাড়া আপনি চলতে পারবেন না। তবে এসকল বিষয়ের ভালো দিক গুলি আপনি ব্যবহার করে উপকৃত হতে পারেন। এছাড়া কিছু বিষয় তো থেকেই যায়। যেমন ফোনের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি নোমোফোবিয়ার জন্ম দেয়। আর এই বিষয়টি আমরা বুঝতেও পারি না । আপনি যদি একটু ভালো ভাবে লক্ষ্য করেন তাহলে দেখতে পাবেন যে স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়ে গুলো আজ কিভাবে এই মোবাইল বা ফোনের প্রতি আসক্ত। আর এখন আপনি প্রশ্ন করতে পারেন যে,এই আধুনিক বিশ্বে ছেলে-মেয়ে গুলো ফোন ছাড়া চলবে কি করে। তাহলে আমরা বলবো যে, অবশ্যই ফোন ব্যাবহার করবে তবে অতিরিক্ত নয়।এই মোবাইল এর প্রতি আসক্তি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি করে। তারা পড়াশোনার জন্য এই ফোন ব্যাবহার কম করে, তারা অন্যান্য বিষয়ে এই ফোন এর ব্যাবহার বেশি করে।


এই ফোনের ব্যাবহার অতিরিক্ত করার ফলে তারা তাদের চোখের ক্ষতি করে। চোখে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। পাশাপাশি তারা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ও ক্ষতি করে। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা লক্ষ্য করি এসব আসক্তির পেছনে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার কারসাজি বা অনলাইন গেম। আপনি নিজেই দেখুন আপনার যদি স্মার্ট ফোন থাকে তাহলে সেটা একদিন এর জন্য ব্যাবহার বন্ধ রাখুন তো । দেখেন যে আপনি আসলে এটা ব্যাবহার না করে থাকতে পারেন কিনা। যদি আপনি থাকতে না পারেন তবে বুঝতে হবে আপনি কি পরিমানে এটার প্রতি আসক্ত। আবার আর একটি বিষয় আপনি লক্ষ্য করবেন যে, আপনি আসলে ফোন চার্জ দিচ্ছেন তবে সেটি এমন জায়গায় রাখতে চাচ্ছেন যে সেটি যেন হাতের নাগালে থাকে। যাতে করে সহজে ফোন চার্জ এ রাখা অবস্থায় ও সেটি আপনি চালাতে পারেন।


আপনি দেখবেন  আজকাল মা-বাবা ও তাদের বাচ্চাদের ছোট থাকা অবস্থাতেই ফোন হাতে তুলে দিচ্ছেন । কেউ হয়তো বলছে বাচ্চা ফোন হাতে না দিলে ঘুমাতে চায় না, কেউ ভাত খেতে চায় না, আবার বাচ্চা যাতে বাইরে বের না হয় এজন্য ও ফোন হাতে দিয়ে বলে তুমি গেম খেলো তবে বাইরে যেও না। আর এ থেকে ছোট অবস্থাতেই এসব বাচ্চারা ফোন এর প্রতি আসক্ত হয়ে যায়। মনোবিদরা এখন বলছে যে, মানুষের মধ্যে নোমোফোবিয়া দেখা যাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন গবেষণায় ও বিজ্ঞানীরা এর প্রমাণ পেয়েছে।
আর একটি বিষয় আমাদের নজরে এসেছে পৃথিবী জুড়ে করোনা মহামারীর কারনে শিক্ষা ব্যবস্থা একদমই ঝিমিয়ে পড়েছে । আর তার উপরে বাসা বেঁধেছে নতুন এক উপদ্রব তা হলো মোবাইল ফোন এর প্রতি আসক্তি। অনলাইন ক্লাস এর জন্য তাদের মা-বাবা দের তুলে দিতে হয়েছে কোমলমতি ছেলে মেয়েদের হাতে ফোন ।


মোবাইল ফোন ব্যাবহার এর কিছু কুফল: 

১. এই ডিভাইস এমন আসক্তি তৈরি করে যার কারণে মানুষ ও খুন হতে হয়। 
২. বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে কিশোরগ্যাং ।
৩. বিবাহিতদের মাঝে বাড়ছে ডিভোর্স।
৪. শিক্ষার্থীরা ভুগছে মানসিক অস্থিরতায়। 
৫. এটাতে শিক্ষার্থীরা বেশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় ব্যায় করে। তারা ঠিক ও পায় না সময় কোন দিক দিয়ে চলে যায়। 
৬. মানুষের মাঝে দেখা দিচ্ছে  অনিদ্রা । 
৭. যৌথ পরিবার ভেঙ্গে একক পরিবার কাঠামো তৈরি হওয়ার ফলে ছেলে মেয়েদের মোবাইল ফোন এর প্রতি আসক্তি বেড়েছে। 
৮. দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের চোখের সমস্যা।



নোমোফোবিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:

১. ফোনের নোটিফিকেশন এলো কিনা তা বারবার চেক করা । 
২. কি মেসেজ এলো, আদৌও এলো কিনা তা বারংবার চেক করা। 
৩. সারাক্ষণ সোশ্যাল মিডিয়াতে থাকতে না পারার উদ্বেগ।
৪. মনের ভেতরে অস্থিরতা কাজ করা ফোন ব্যাবহার করতে না পারার কারণে।
৫. হঠাৎ ফোনের ব্যাটারি লো হয়ে গেলে অস্থিরতা প্রকাশ করা। 
৬. খাবারের প্রতি অনীহা ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় ।
৭. অনিদ্রা দেখা যায়। 
৮. মানসিক চাপ, অবসাদ ও একাকিত্বের সমস্যা দেখা যায়।


মোবাইল ফোন ব্যাবহার কমানোর কিছু উপায়: 

১.ধীরে ধীরে এটার ব্যাবহার আমাদের কমাতে হবে। 
২.সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাবহার কমাতে হবে । 
৩.বাচ্চাদের হাতে মোবাইল ফোন দেওয়া যাবে না । 
৪. মোবাইল ফোন বা অন্য কোন ডিভাইস ব্যাতীত বিনোদন এর ব্যাবস্থা করতে হবে।
৫. বিকেলে সময় করে ঘুরতে বের হতে হবে ।
৬. ছেলে মেয়েদের বিকেলে মাঠে খেলতে নিয়ে যেতে হবে । 
৭. বাবা মাকে সতর্ক থাকতে হবে যেন তার সন্তান অতিরিক্ত ফোন ব্যাবহার না করে। 
৮. ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।


যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন গবেষক বলছে মোবাইল ফোন এর অতিরিক্ত ব্যাবহার এর ফলে মানুষ এর সহজেই চোখ নষ্ট হতে থাকবে অর্থাৎ চোখে কম দেখবে, কানে কম শুনবে বিষয়টি নির্ভর করবে ব্যাবহারকারী কি হারে ফোনটি ব্যাবহার করছে। শারীরিক বিভিন্ন অসংগতি দেখা যাবে, অস্থিসন্ধি গুলোর ক্ষতি হবে। এছাড়া মোবাইল ফোন থেকে  বিভিন্ন ক্ষতিকর তরঙ্গে বের হয় যা মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষতি করে অর্থাৎ ক্যানসারের সৃষ্টি করে। এছাড়া বিভিন্ন কোষ কলার ক্ষতি হতে পারে । পরিশেষে বলা যায় যে, শারীরিক ভাবে একজন মানুষকে   সুস্থ থাকতে গেলে তাকে অন্তত আট ঘণ্টা ঘুমানোর প্রয়োজন। তাই মোবাইল ব্যাবহার এর কারনে যেন আমাদের এই ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে এদিকে নজর দিতে হবে। 
আর যেহেতু যোগাযোগ এর সহজ উপায় হচ্ছে এই মোবাইল ফোন সেহেতু বিজ্ঞান এর এই আবিষ্কার এড়িয়ে চলার ও উপায় নেই। তবে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যে, অপব্যবহার যাতে না হয় । ছেলে মেয়েরা যেন এর প্রতি আসক্ত না হয়। এই ভয়াবহতা থেকে ছেলে মেয়েদের দূরে রাখতে হলে তাদের হাতে তুলে দিতে হবে বিভিন্ন বই, ম্যাগাজিন, পত্র পত্রিকা। যোগাযোগ ঘটাতে হবে সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তাই বিনা প্রয়োজনে এর অতিরিক্ত ব্যবহার কমাতে হবে। আর তরুণ সমাজ যাতে এর ভয়াবহতায় ধ্বংস না হয় এদিকে অভিভাবকদের খেয়াল রাখা অতীব জরুরি।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন